পুস্তক আলোচনা -
ঋ রুদ্রযান (শাল্যদানী রূপম)-
প্রকাশনী- তরঙ্গ পাবলিশার্স, মূল্য- ১২২/-
বছরদুয়েক হ'য়ে গেলো, লেখালেখির ভেতর থাকতে থাকতে জনৈক শিক্ষক মহাশয়ের (গণমাধ্যমেই উপস্থিত থাকায় নামোল্লেখ ক'রে তাঁকে বিব্রত ক'রতে চাইনা) পড়াতে ব'সে করা একটি গল্প মাঝেসাঝেই মনে প'ড়ে যায়। পাঠ্য কবিতাগুলি পড়াতে গিয়ে তিনি ব'লতেন, যে কোনো একটি কবিসম্মেলনে আমন্ত্রিত হ'য়ে অদ্ভুত দুর্বোধ্য কিছু কবিতা শুনে তিনি জনৈক কবিকে আড়ালে প্রশ্ন ক'রেছিলেন, "আচ্ছা এই কবিতা বিষয়টি ঠিক কী ব'লুন তো? ", উত্তরে সেই ব্যক্তি ব'লেছিলো "কবিতা... কবিতা একটি বিষয়, আবার কী? "। ছোটো ছিলাম, পড়াশুনো ক'রতে তেমন ভালোও লাগতোনা, অতএব নিয়মের বাইরে সেদিন গল্প শুনে আমরাও নিছক হেসেইছিলাম। এ ঘটনারও হ'য়ে গেছে প্রায় সাত বছর। কিন্তু আজকাল যেন নিজেকে বড়ো তুচ্ছ বোধ ক'রি। বোতাম টিপে লেখার এই গণমাধ্যম যে বাংলা সাহিত্যের কী অবস্থা ক'রেছে সে সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করার অবকাশ এখানে নেই, কিন্তু এ কথা সত্যিই, যে কবিতার সংজ্ঞা সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দুঃসাহস যেখানে বিশ্বের প্রথিতযশা কবিরাই ক'রতে পারেননি, তবে যশলোভী অদক্ষদের মেকি এই পৃথিবীতে আলাদা ক'রে আমি উত্তর কী পাবো? যদিও পরে অনেক মণিমুক্তোর সন্ধান এখানেই পেয়েছি। তখনও অবধি বাড়িতে কোনো কবিতার বই না থাকায় আলাদাভাবে তা পড়ার আগ্রহও জন্মায়নি। এখনই বরং কিছু প'ড়ছি সামান্য।
অত্যন্ত স্থূল দৃষ্টিতে হ'লেও কবিতার যে বিবর্তনটি আমাদের চোখে প্রায়শই ধরা দেয়, তা হ'লো কাঠিন্য। জীবনদর্শনের সহজতর প্রকাশ যেন খুব বেশী কলম ফুটিয়ে তোলেনা আজকাল, তুলতে চায়না। তথাকথিত প্রাচীনপন্থী বা গতানুগতিক মানসিকতার বিগত প্রজন্ম একে কিঞ্চিৎ কটাক্ষ ক'রলেও এর পেছনে যে বিস্তৃত ব্যাখ্যা আছে তা সম্ভবতঃ তাঁরা জানেননা বা জেনেও জানতে নিরুৎসাহী থাকেন। আসলে কবিতা থেকে শুরু ক'রে যেকোনো প্রকার শিল্পচিন্তার জন্মই হয় ব্যক্তির নিজেকে অন্বেষণের প্রেরণা থেকে। অদ্ভুত এক নেশার মতো চর্চার ভিন্নতর প্রক্রিয়াগুলি ক্রমাগত মানুষকে তার অন্তঃস্থিত দর্শনের অধিকতর নিকটবর্তী হ'তে প্ররোচিত করে। একান্ত নিজস্ব তাগিদে দীর্ঘ সময় ধ'রে অনুচ্চারিত এই সাধনাকে যখন মানুষ অল্প কথায় সকলের সামনে উজাড় ক'রে দিতে চায় একেকটি কবিতা যেন সেসবের ক্ষুদ্রতর প্রতিচ্ছবি হ'য়ে তার খাতার পৃষ্ঠায় একত্রিত হয়। এখন যে প্রশ্নগুলি উঠে আসে, বিবর্তন তবে কোথায় হ'লো আর সহজতর কবিতা কি তবে কোনো কবিতা নয়? তা ছাড়াও এখন সহজতর ভাষায় কেউ কি কবিতা লেখেনা নাকি আগে কঠিনতর কবিতা ব'লে কিছু ছিলোনা? সেই কথাই ব'লি এবার।
আসলে প্রজন্মের বা কালের যে ধারণা, তা কিন্তু কেবল একটি মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন দ্বারা সূচিত করা যায়না, স্বতঃস্ফূর্তভাবে একাধিক মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অভিমুখ বদল অকস্মাৎ তার উপস্থিতি জানান দেয় মাত্র। বিবর্তন ভাষার হ'তে পারে, ব্যকরণের হ'তে পারে, বাচনভঙ্গিমার হ'তে পারে, প্রয়োগের হ'তে পারে কিন্তু সামগ্রিক সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত একগুচ্ছ কলমে কখনও বহির্মুখী মনোভাবের আধিক্য দেখা যায়, কখনও বা অন্তর্মুখী মনোভাবের। আসলে সমস্ত কবিরই এদের মধ্যে কোনো একটির প্রতি স্বাভাবিক ঝোঁক থাকে, যা মূলতঃ নির্ভর করে তিনি কী মনোভাব নিয়ে কবিতা লিখতে এসেছেন তার ওপর। যদি অন্তঃস্থিত বার্তায় তিনি পাঠকের পক্ষপাতিত্ব আশা করেন সেক্ষেত্রে তাঁর সৃষ্টি একান্তভাবে বহির্মুখী হবে এবং নিজেকে পাঠকের (কিছুক্ষেত্রে বিষয়ের) স্থানে রেখে তিনি সৃষ্টিকে যথাসম্ভব সুললিত করবার চেষ্টা ক'রবেন। কিন্তু অপর পক্ষে যাঁরা মনে ক'রছেন নিজস্ব সৃজন ব্যতীত অন্য কারোর দায় তাঁদের নেওয়ার কথা নয়, সেহেন কলমগুলি কিন্তু বিষয়ের গভীরতাকে প্রকাশের তুলনায় অতিরিক্ত প্রাধান্য দেবে। যার ফলে সে কবিতা তাৎক্ষণিক জনপ্রিয়তা পাক আর না পাক, নির্দিষ্ট শ্রেণীর পাঠকের 'সংগ্রহে' একদিন ঠিক স্থান ক'রেই নেবে। উভয়েরই গুরুত্ব সমান, উভয়েই কালের নিরিখে ভিন্নতর অভিমুখের পরিচায়ক আর যাঁরা এই দুয়ে নিশ্চিন্তে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন তাঁরা জ্ঞানবৃদ্ধ দার্শনিক।
কিন্তু এই যে অন্তর্মুখী কলমগুলির কথা ব'লছিলাম, এরা পাঠকের চিন্তাশক্তিকে পরীক্ষা করে প্রতিনিয়তঃ। এহেন কলমচীদের সবথেকে বড়ো বৈশিষ্ট্য হ'লো এঁদের ব্যক্তিগত জীবনদর্শন থেকে কবিসত্ত্বাকে আলাদা ক'রে দেখা নিতান্ত কঠিন হ'য়ে দাঁড়ায়। যার ফলে কবিতার আগে কবি ও তাঁর আনুষঙ্গিক পরিচয় জানবার একটি ভিন্নতর প্রেক্ষিতের উদ্ভব হয়। বহির্মুখীদের মতো এঁরা অতি সহজে মানুষের মুখে মুখে ফেরেননা আর ঠিক তখনই প্রশ্ন আসে, "তবে যেচে কেন প'ড়বো? "। বাংলার বহু স্রষ্টার সাথে আমরা পরিচিত হ'তে পারিনি শুধু এই কারণে। এ যেন চলতি ট্রেনে "নিয়েই দেখুননা, মিষ্টি নাহ'লে পয়সা ফেরত পাবেন"। নিজেকে বোদ্ধা প্রমাণ ক'রতে লোকে দুয়েকটি তেমন কবিতার বই কিনে ফেলতেও পারে, কিন্তু আজকাল যেখানে রহস্য রোমাঞ্চ ব্যতীত লোকে গল্পের বইই কিনতে চায়না সেখানে কবিতার কাছে তারা নিজস্ব বুদ্ধিবৃত্তির পরীক্ষা দিতে রাজি হবে, এ কথা প্রবলভাবে হাস্যকর নয় কি? তা ছাড়াও গণমাধ্যমের হাতে প'ড়ে বাংলা কবিতার এই মুহূর্তে এমন দুর্ভাগ্য যে নতুন পাঠক তো তার তৈরী হয়ইনা, উপরন্তু পুরোনোকেও সে হারিয়েছে। ভাষা কঠিন (!) ব'লে যারা রবীন্দ্রসাহিত্য প'ড়তে চায়না, তাদের কেইবা জীবনানন্দ আর কেইবা শক্তি চট্টোপাধ্যায়। মাঝখান থেকে সাহিত্যচর্চায় প্রত্যক্ষ উৎসাহ না পেয়ে নিজস্ব চেষ্টায় উঠে এসেছে বেশ কিছু এই জাতীয় কলম। এদের মধ্যে ক'জন বাংলা সাহিত্যের উত্তরাধিকার তা সময় ব'লবে।
ঠিক এইবারে আমরা প্রবেশ ক'রবো বই সংক্রান্ত আলোচনায়। এতোদূর পড়বার পরে হয়তো পাঠকের ধৈর্যচ্যুতি ঘ'টতেও পারে, তবু আশা ক'রবো তাঁরা অধমকে নিজগুণে ক্ষমা ক'রবেন, কারণ উপরোক্ত গৌরচন্দ্রিকা ব্যতীত এ বক্তব্য রাখা আমার পক্ষে অসম্ভব ছিলো। এই মুহূর্তে আপনাদের সকলের জ্ঞাতার্থে আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন ক'রবো যে যিনি এই বইটি লিখেছেন এই ব্যক্তি কে? ঠিক কোন আত্মীয়তার বশে আমি তাঁর বইটি সম্পর্কে আলোচনা ক'রছি? ইনি কি এমন কিছু লিখেছেন যা আসলে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে আলোচনাসাপেক্ষ? এ সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে আমরা চোখ রাখবো ঠিক এর আগের অনুচ্ছেদে যেখানে আমি ঠিক ২টি কথা নিজস্ব উপলব্ধি থেকেই ব'লেছি। ১। অন্তর্মুখী কলমের ক্ষেত্রে কলমচীর ব্যক্তিজীবন ও কবিসত্ত্বাকে আলাদা ক'রে পর্যবেক্ষণ করা ভীষণ কঠিন, ২। নিজস্ব উৎসাহে যে ব্যক্তি কবিতার জন্য নিজেকে তৈরী ক'রেছে সে চরিত্রগতভাবেই অন্তর্মুখী হবে। এখানে 'কবি' সম্বোধন আমি কেন ক'রছিনা সে উত্তর পরে দেওয়া যাবে, কিন্তু আগেই ব'লে রাখি উক্ত ব্যক্তি আমার এবং অনেকের পরিচিত হ'লেও তার 'ব্যক্তিত্ব' সম্পর্কে অধিকাংশই অবহিত নয়, হয়তো তেমনভাবে আমিও ন'ই। ব্যক্তিত্ব ব'লতে তার অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যের কথা আমি ব'লছিনা, ব'লছি সাধারণের সঙ্গে তার জীবনদর্শন সংক্রান্ত পার্থক্যের কথা, যা না জানলে এই বইকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা আমার ছিলোনা। তার কারণ, জ্ঞানার্জন হ'তে উদ্ভূত যে বিশেষ কার্যকলাপগুলি সে তার দৈনন্দিন জীবনযাপনের অংশ ক'রেছে, বইয়ের অন্তর্গত 'লেখাগুলি' (এখানেও আমি কবিতা ব'লে তাদের আখ্যায়িত ক'রছিনা) তাদেরই প্রতিফলন মাত্র। ভারতীয় দর্শনের (মূলতঃ শাস্ত্রচর্চা, এটুকুও আমি ব'লতে রাজি ছিলামনা, প্রয়োজনীয়তা বাধ্য ক'রলো) কিছু নির্দিষ্ট অংশকে কলম ব্যাখ্যা ক'রেছে স্বল্প কথায় নিজের মতো ক'রে।
এই প্রসঙ্গে ব'লি, উক্ত ব্যক্তির পূর্বে প্রকাশিত গ্রন্থদ্বয়ের ভেতর আমায় ঢুকতে হ'য়েছিলো এই বিশ্লেষণবশতই। ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় সে দাবি ক'রেছিলো, যে ৩টি বই আসলে তার নিজস্ব চর্চার প্রেক্ষিতে ৩টি সম্পূর্ণ পৃথক সময়ের দলিল। কিন্তু বইগুলি প'ড়ে মোটামুটি যেটুকু ধারণা হ'য়েছে, তাতে মনে হ'য়েছে এই কথাটি একেবারে ভুল কিছু না হ'লেও আসলে 'আংশিক সত্য'। সাধারণের তুলনায় সংখ্যায় কম হ'লেও তেমন কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় আর পাঁচজনের মতো একাধিক বিষয় নিয়েই সে চর্চা শুরু ক'রেছিলো, বর্তমানে 'কেটেছেঁটে' তা একমুখী হ'য়েছে মাত্র। কিন্তু যে বিষয়টি মূলতঃ আমার দৃষ্টি আকর্ষণ ক'রলো, জানিনা সে নিজে এতো কথা ভেবেছে কিনা, হয়তো আমারই অতিরিক্ত জটিল ভাবনা... বইয়ের ২য় বা ৩য় পৃষ্ঠার একেবারে ওপরে ইংলিশে বইয়ের নামের তলায় একটি বাক্যবন্ধ উল্লিখিত হ'য়েছে, "আ পোয়েটিক ফিকশন"। অথচ খুব খুঁটিয়ে যদি লক্ষ্য করা যায় অন্যান্য বইগুলির তুলনায় এই লেখাগুলির প্রকাশে কিন্তু কল্পনার পরিসর অত্যন্ত কম। সম্ভবতঃ এই প্রক্রিয়ায় পরোক্ষে সে শাস্ত্রীয় নাস্তিকতাবাদী চিন্তাধারাকে তার বইতে স্থান ক'রে দিয়েছে, যা ব'লছে "নৈতিকতা সংশয়াতীত হ'লেও তার ব্যাখ্যা নিয়ে বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ বর্তমান"। অর্থাৎ লেখায় অভেদ্য আদর্শের উল্লেখ থাকলেও বিশ্লেষণী দর্শন তো তার একান্ত নিজের, এ সত্যিকে সে অস্বীকার করেনি। এ সততার জন্য সাধুবাদ তার অবশ্যপ্রাপ্য। উপরন্তু প্রাপ্ত জ্ঞানের নিরিখে সম্পর্ক ও অন্যান্য বিষয়ে পুরুষ ও নারীর গুরুত্বের ভেদাভেদ কলম যথেষ্ট সুচারুভাবে অপনয়ন ক'রেছে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এছাড়াও লক্ষ্যণীয় বক্তব্যে বলিষ্ঠতার তারতম্য থাকলেও প্রকাশে এক মাতৃসুলভ স্নেহসূচক কমনীয়তা আছে, যা তার স্বাভাবিকত্বের পরিচায়ক।
সবশেষে ব'লি, এই বইয়ের গঠনগত বৈশিষ্ট্য মূলতঃ ৫টি। ১। বক্তব্যের সংক্ষিপ্ততা, ২। যতিচিহ্নের ব্যবহারে (বা অব্যবহারে) পাঠকের পঠনক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ, ৩। 'গেছে'কে 'গ্যাছে' বানানে লেখা (জানিনা অভিধান একে অনুমোদন দিয়েছে কিনা), ৪। হাতে আঁকা কিছু সাংকেতিক ছবি এবং ৫। এই বইটি স্বতন্ত্র পড়া যায়, যা অন্যদু'টির ক্ষেত্রে ভীষণভাবে অনুপস্থিত। অর্থাৎ তাদের প'ড়তে হ'লে চিন্তা ও কাব্যিক পরিচয়ের ন্যূনতম দৈন্যও থাকা চ'লবেনা। কিন্তু মূল যেটি সমস্যা, পূর্বপ্রকাশিত বইদু'টি সাধারণ পাঠকের মধ্যে এই কলমের যতোখানি গ্রহণযোগ্যতা তৈরী ক'রেছে ব'লে আশা করা যায়, লেখা সংক্ষিপ্ততর ও আপাতদৃষ্টিতে সহজতর হ'লেও এই বইটি সংগ্রহ ক'রতে তারা কতোখানি উৎসাহী হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ের অবকাশ আছে আর ঐ বইদু'টি না প'ড়ে এই বইটি নেহাত পড়া গেলেও আত্মস্থ করা বেশ কঠিন। অকারণে মিথ্যে ব'লবোনা, আগের বইদু'টি... মূলতঃ ২য়টি প'ড়তে প'ড়তে আমার রীতিমতো ধৈর্যচ্যুতি ঘ'টছিলো। শিরঃপীড়া এতোই তীব্র আকার ধারণ ক'রেছিলো, যে এই শেষ বইটি সেক্ষেত্রে প্রায় ঔষধের কাজ করে এবং সেজন্যই উপভোগ্যতা বজায় রেখে আমি এটি পড়া শেষ ক'রি। এ কথা যেমন ভুল যে প্রতিটি লেখাই অর্থহীন হ'য়েছে, তেমনই সবক'টি লেখার ব্যাখ্যা যে আমার পক্ষে সম্ভব হ'য়েছে এমনও নয়। অন্তর্মুখী কলম স্বভাবতই পাঠককে সৃষ্টির ব্যাখ্যা দিতে দায়বদ্ধ থাকেনা, কিছুক্ষেত্রে নিজেকেও। তবুও একই মানের জটিল অঙ্কের মতো প্রতিটি লেখা টানা প'ড়ে গিয়ে তার অর্থোদ্ধার যে বীভৎস কষ্টকর, এ কথা অনস্বীকার্য। এ প্রসঙ্গে ব'লি, কোনো লেখা কবিতা হ'লো কিনা বা লিখিয়ে কবি হ'লেন কিনা তার দায় একমাত্র মনোজ্ঞ পাঠকই নিতে পারেন, কালের প্রেক্ষিতে অতিক্ষুদ্র বিন্দুর মতো এই কয়েক মুহূর্তের পরিচয়ে আমি তা জানাতে অপারগ। তবে হ্যাঁ, এই বইয়ের লেখকের ব্যক্তিত্ব এবং রচনার সাথে যদি পরিচয় ক'রতে চান আগে এই ধাঁচের 'স্বীকৃত' কবি ও কবিতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন, যেহেতু ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে না জেনে এই লেখার রসাস্বাদন করা এককথায় অসম্ভব। কবিতা লেখার মতোই পঠনের মনষ্কতা পোষণ করাও যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয়, এ কথায় আশা ক'রি আমার মতো আপনারাও বিশ্বাস রাখেন।
No comments:
Post a Comment