Monday, May 4, 2020

প্রহর গঙ্গোপাধ্যায়



পত্রসাহিত্য -   

অনামিকা, তোমার প্রতি


প্রিয় অনামিকা,                                                                           প্রযত্নে রবীন্দ্রনাথ।       

এপ্রিল ১৭, ২০২০
রাত ২টো বেজে এগারো মিনিট


"আমার যৌবনে তুমি স্পর্ধা এনে দিলে,
তোমার দু’চোখে তবু ভীরুতার হিম!
রাত্রিময় আকাশের মিলনান্তক নীলে
ছোট্ট এই পৃথিবীকে করেছো অসীম!"

-এইযে চিঠিটা লিখছি এখন, তুমি জানো আবহে কোন গানটা বাজছে? মনে পড়ে? সেইযে গানটা আমরা একসাথে শুনতাম.... হোয়্যাটসঅ্যাপে চ্যাট করতে করতেও দুজনেরই হেডফোনে আমার ওই দাঁড়িওয়ালা বুড়োটা থাকত...! মনে পড়ে?

জানি তোমার মনে পড়ে। মনে না পড়ার মতন কোনো স্মৃতি তো ছিলনা আমাদের... আসলে যখন লিখতে বসলাম, তখন জানতাম ঠিক কি কি লিখতে হবে, কিভাবে লিখতে হবে, কেনই বা লিখতে হবে; কিন্তু লিখতে বসে আমার সব কেমন যেন গুলিয়ে গেল। এমনকি কাকে লিখবো সেটাও ভুলে গেলাম....!

এই চিঠিটা আদৌ তোমার কাছে পৌঁছোবে কিনা জানিনা... আমিও হয়ত চাইনা যে পৌঁছে যাক। তবু লিখছি!
জানো, আমি রোজ তিল তিল করে মরবার জন্য তৈরী করছি নিজেকে? এ মৃত্যুতে কোনো পাপ নেই অনামিকা। আছে বেঁচে থাকার খিদে..... তোমার মাঝে বেঁচে থাকার খিদে! রোজ আচমকা এগিয়ে গিয়ে গ্রিন সিগনালে রাস্তা ক্রস করছি- যদি একবার.... যদি একবার মৃত্যু এসে ঠোঁট রাখে আমার মৃত ঠোঁটে, তার জন্য! সন্ধ্যের তাড়নায়, ফিরে যাওয়া নিয়মের ফাঁকে আজকাল মদের দোকানেও লাইন পড়ে জানো?
আমিও খুঁজে চলেছি ওরকম একটা মৃত্যুকে.... টলমলে পায়ে অনেকটা চলার পর যদি একবার আছাড় খেয়ে পড়ি, তবে বেশ হয়। একটা শেষের শুরু দরকার আমার ভীষণভাবে।
বিশ্বাস করো, আমি রোজ একলা হেঁটে যাই অন্ধকার রাতে অজানা স্বপ্নের দিকে.... আমায় ওই বুড়োটা বেঁধে ফেলে একটা চার দেওয়ালের ঘরে...সুমনের মতো আমার গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে বারংবার!
কিন্তু পারি না....
চিঠিটা কেন লিখছি জানো? এই মৃত্যুতে আর কারো অধিকার নেই তুমি ছাড়া। আজকাল আচমকা বেঁচে উঠে আর ছুটতে ইচ্ছে করে না অন্ধকার গলিতে.... পেতে ইচ্ছে করে না স্পর্শের বিন্দু মাফিক বেঁচে থাকার অধিকার; তার থেকে তো মৃত্যু ভালো, মহত্তর!
আমাকে তুমি যা খুশি তাই ভাবতে পারো অনামিকা! কিন্তু বিশ্বাস করো, যেদিন নিজেকে জড়িয়ে ধরে আমি হেঁটে ছিলাম মৃত্যুর কাছে, সোজা বারোতলার ছাদের রেলিঙে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম,  দেখেছিলাম তোমার মুখ! ধাঁ করে আকাশ থেকে নেমে এসেছিল একটা আস্ত উড়োজাহাজ... সোজা মাথার ভিতর ঘুরপাক খেল আমার ব্যর্থতাগুলো... আমি আবার প্রেমে পড়লাম তোমার! নতুন করে ভাবতে ভাবতে দুম করে মনে পড়ল জন্মান্তরের থিওরিটা। কি হবে পরের জন্মে জানো? আচ্ছা পরের জন্মে না হয় আমি কুকুর হয়ে জন্মাব.... কিংবা হব তোমার প্রিয় শাড়ি! তোমার আঁচলে জড়িয়ে থাকলে নিশ্চয়ই বিশ্বাস করবে আমায়?
যদি তোমায় ভালোবেসে থাকি তবে তুমি ঠিক "মানুষ" হ'বে দেখো! আমি না হয় তোমার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী.... কারণ এই জন্মে তো তোমার "শাড়ি" হওয়া হলো না আর.....!

কি লিখবো ভেবেছিলাম, আর কি লিখে ফেললাম দেখো! তবে আমাকে তুমি যা খুশি তাই ভাবতে পারো অনামিকা! কিন্তু বিশ্বাস করো, আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি! যেদিন প্রথম দেখায় জড়িয়ে ধরেছিলাম তোমায় প্রেম বলে, সেদিনও সোজা বারোতলার রেলিঙে দাঁড়িয়েছিলাম একবার! সেদিন বুঝতে পারিনি যে, আমাকেও নামতে হবে ছাদের থেকে নিচে..... সেদিন বুঝিনি আমাকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে সোজা মৃত্যুর বুকে, পরের জন্মে আমি তোমার "শাড়ি" হব বলে..... ভালো থেকো অনামিকা..... ভালো থেকো ভালোবাসায়....

ইতি,
প্রহর গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা ৭৪

3 comments:

  1. খুব খুব ভালো লাগলো। তবে যদি কিছু মনে না করেন। একটা কথা বলছি। দ্বিতীয় স্তবকের চতুর্থ লাইনে দাড়িওয়ালা কবি হলে । আমার ভালো লাগতো। যাইহোক আবার বলি সত্যি খুব সুন্দর লেখা হয়েছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মাথায় রাখলুম। অরিজিনাল ভার্শনে চেঞ্জ করে নেবো

      Delete