পত্রসাহিত্য -
মনার প্রতি..
প্রিয় মনা,
অনেকদিন খোঁজ পাই না তোমার।সত্যি কথা বলতে কী ইচ্ছে করেই খোঁজ নিই
না।কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাসের গৃহবন্দী জীবনে তোমার কথা প্রায়ই মনে পড়ে,তাই ফেসবুকে তোমায় চিঠি লিখতে বসলাম।যদিও
জানি আমার ফ্রেন্ড লিস্টে তুমি নেই।কিন্তু পোস্ট পাবলিক করা আছে তাই তুমি হয়ত
পড়তেও পারো।এ এক আজব জিনিস বলো?এখানে লিখলে কোনো পোস্টম্যান ছাড়াই নির্দিষ্ট মানুষের কাছে
চিঠি পৌছে যায়।তাই এখানে লেখা।তুমি কেমন আছো?তোমার সেই বোন যে তোমাকে সবসময় লেগপুল করতো সে কেমন আছে?আর তোমার বাগানের গোলাপগুলো?তারা ভালো আছে?কী বড় বাগান তোমাদের,কলাগাছ,লেবু-কুল আরো কত কী গাছের ভীড় বাগানে!তুমি ভিডিও কল করে সব
দেখাতে তো আমায়!কী সুন্দর সাজানো বাগান!আর সেই হাঁস আর মুরগিগুলো যারা এখানে
সেখানে বাগানের ঝোপঝাড়ে ডিম পাড়ত?তোমার বাবার তো ভীষণ অসুখ,তিনি কেমন আছেন?এই কোয়ারেন্টিনের সময়ে তুমিই বা কেমন করে
ওষুধের জোগাড় করছো?তোমার বাগানে কাজ করতে আসতেন হোসেনচাচা তিনি
আর আসেন এখন?লকডাউনে আসতে না পারলেও তাঁর মাইনেটা দিয়ো
কিন্তু।জানি তুমি দেবে,তবুও বলা।তোমার গ্রামের বাড়ির বড়-চাচা যিনি
বেশ কয়েকজন সন্তান রেখে অকালে মারা গেছেন তাঁর পরিবারটাকেও দেখো।তোমাকেই বা আর কত
বলব বলো।কিন্তু এই লকডাউনের সময় মানুষের কাজ নেই,খাদ্যের অভাব।যতটা পারবে সাহায্য করবে,আমার অনুরোধেই না-হয় করবে।সব কিছুর ফাঁকে
নিজের খেয়াল রাখতে ভুলো মা যেন।স্বাস্থ্যবিধি যথাসম্ভব মেনে চলবে।আমিও তাই
করি।স্যানিটাইজার,মাস্ক এসব তো মাস্ট বলো?জানো,এখন কাজ নেই কিছু,বাইরে যাওয়া নেই,একা একা নিজের ঘরেই সময় কাটে,বিকেলবেলা ছাদে উঠে একটু আকাশটা দেখে
আসি।স্মৃতিগুলো এক এক করে মনের ক্যানভাসে ভেসে ওঠে বিছানায় ল্যাদ খাওয়ার সময়।কত
স্মৃতি বলো?সারাশহর চষে বেড়ানো,দুজনে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো।তোমার হাত ধরলেই
গায়ে কেমন একটা রোমাঞ্চ হতো,কেমন একটা অনুভূতি। রবীন্দ্রনাথ বোধ হয় এই মুহুর্ত গুলোর
কথা ভেবেই লিখেছেন,"গায়ে আমার পুলক
লাগে চোখে ঘনায় ঘোর"।বাইরে ঘুরে বেড়ানোর থেকেও বেশী আনন্দ পেতাম তোমায় ফোন
করে,হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে।আমি তো আগে মোবাইলের
কি-বোর্ডে বাংলা হরফ টাইপ করতেই পারতাম না।তুমি হাতে ধরে শিখিয়ে দিয়েছিলে।কীভাবে Ridmik
Keyboard এর সাহায্যে দ্রুত বাংলা লেখা যায়।আরো কতকিছু
শিখিয়েছিলে বলো?কত তত্ত্বকথা,কত গান-কবিতা যেগুলো আগে কোনোদিন নামই শুনিনি
সেগুলো পড়ে শোনাতে।হঠাৎ হঠাৎ গেয়ে উঠতে।দেশী বিদেশি কত বই-এর নাম বলতে,আমি সেগুলো খুঁজে খুঁজে পড়তাম।অনলাইনে অর্ডার
করে আনাতাম কখনো বা PDF পড়তাম।কত ইমোজির
আদানপ্রদান হত!সে এক দিন ছিল!তোমার কিন্তু গানের গলা ভালো না,তবুও হেঁড়ে গলায় গাইতে "ভালোবেসে সখী
নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে"। আমি একটু ছিঁচকাঁদুনে
ছিলাম।তুমি বকাঝকা করলেই কেঁদে ফেলতাম।তুমি কান্না সহ্য করতে পারতে না একদমই।ফোন
কেটে সুইচ অফ করে দিতে।কী জ্বালা বলো!তোমার জন্যই কান্না আর তুমিই কি না ফোন সুইচ
অফ করে দিচ্ছো।মনে আছে আমার শরীর খারাপ হলে তুমি কী করতে?যতক্ষণ না আমি বলতাম,"আমি ঔষধ খেয়েছি,আমার শরীরটা এখন ভালো লাগছে" ততক্ষণ
তুমি কথা বলতে না।ঔষধ খেতে বরাবরই আমি বিরক্তবোধ করি।যতটা সম্ভব ঔষধ কম খাওয়ার
চেষ্টা করি কিন্তু তুমি সেটা শুনবেই না।কোনো চাকরির পরীক্ষার ফর্ম-ফিল-আপ এর দরকার,সেটা তুমি না করে দিলে আমার হতই
না।ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে সব কথা একমাত্র তোমাকেই আগে বলা চাই।বাসে,রাস্তায় কারো সাথে ঝগড়া হলে তুমি বলতে 'বেশ করেছো, যেই বিরক্ত করতে আসুক দু-ঘা বসিয়ে দেবে,কেউ তোমাকে বাঁচাতে আসবে সে অপেক্ষা করো না' শুধু কী তাই ভুল কাজ করে অনুতাপ করলে তুমি
বলতে,"যা করেছো ঠিক আছে,অত ভেবো না,পরেরবার থেকে আর করো না"।তুমিই তো প্রথম
আমায় লেখার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলে।নিজে কিছু লিখবো,এ তো আমি স্বপ্নেও ভাবিনি।তোমার পত্রিকার
জন্য লেখা চাইলে একদিন,আজও মনে আছে ১৯ শে ফেব্রুয়ারির সন্ধেবেলা,তুমি বললে ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবসে
একটা দেওয়াল পত্রিকার জন্য কিছু একটা লেখো।আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম!কোনোদিন লিখিনি
কিছু!কী লিখবো!খুব চিন্তা হচ্ছিল সেদিন।কিন্তু তুমি বলেছো,আমি সেটা না-করে থাকতে পারি?লিখে ফেললাম ভাষা দিবস সম্পর্কে এক
প্রবন্ধ।তোমার পত্রিকায় সেটা স্থান পেল।তোমার বন্ধুরা আমার পরিচয় জানতে চাইলে
বলেছিলে আমি তোমার খুব ভালো বন্ধু। সত্যিই আমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।সমান মন ও
মানসিকতার মানুষ আমরা।একই পথের পথিক ছিলাম।এই দেখো কীসব কাসুন্দি ঘেঁটে চলেছি।যাক
গে ছাড়ো ওসব।চিঠিটা পড়লে খবর টবর দিয়ো।তোমার ভালো থাকার সংবাদে বরাবরই খুশি হই
তো।আজ এখানেই শেষ করি,পরে কোনোদিন স্মৃতিকথার পসরা নিয়ে
বসবোখন।ভালো থেকো।
ইতি----
কোন
নামটা বলব?সবগুলোই তো জানোই।পছন্দমতো একটা বসিয়ে নিয়ো।
No comments:
Post a Comment